কেনাকাটায় অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও চিকিৎসাসেবায় ঠকবাজিসহ নানা বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা খাতের বড় চার দপ্তরসহ ১৭ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌনে ৪ হাজার কোটি টাকা নয়ছয়ের (অনিয়ম-দুর্নীতির) তথ্য মিলেছে। গুরুতর অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এসব অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিদের কেউ কেউ সরাসরি জড়িত। আবার অনেকে পরোক্ষভাবে অনিয়ম-দুর্নীতিতে সায় দিয়েছেন। দায়ীদের চিহ্নিত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাব্যক্তিদের চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ অডিট অধিদপ্তর। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কর্মকর্তারা জানান, বিপুল অঙ্কের এ অনিয়ম-দুর্নীতি শুধু স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, কেন্দ্রীয় ঔষাধাগার (সিএমএসডি) ও ১৭ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের। এ ছাড়াও অডিট করা হয়েছে সব সিভিল সার্জন কার্যালয়, জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। অডিট করা হয়েছে ২২টি বিশেষায়িত হাসপাতালেও। এসব প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পেলে এই অঙ্ক আরও বড় হবে। ১৬ প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে।
গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল : রোগীদের খাবারের জন্য কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ থাকলেও ঠিকমতো খাবার দেওয়া হয় না বলে গুরুতর তথ্য পেয়েছে অডিট দল। ৫০০ রোগীর জন্য ৩টি রসুন, ৫টি পেঁয়াজ ও ২৫০ গ্রাম আদা দিয়ে মাংস রান্না করার মতো গুরুতর অনিয়ম পাওয়া গেছে। অথচ প্রতিরোগীর জন্য দৈনিক বরাদ্দ ১২০ টাকা।
তাজউদ্দীন মেডিক্যাল ও ময়মনসিংহ মেডিক্যালে ১৩২ কোটি ২১ লাখ ৫১ হাজার ২৫৬ টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১২৮ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতিই তাজউদ্দীন মেডিক্যালের। বাকি চার কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিক্যালে। ময়মনসিংহ মেডিক্যালের সেবার মানে সন্তোষ প্রকাশ করেছে অডিট দল।
তাজউদ্দীন মেডিক্যালের অডিটের কয়েকটি আপত্তিতে বলা হয়, ব্লাড ব্যাংকের দীর্ঘদিন আগের দাবিদারবিহীন ৪ কোটি ৪২ লাখ ৪১ হাজার সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়নি। অতিরিক্ত শয্যার রোগীর পথ্য সরবরাহ দেখিয়ে ৭ কোটি ২ লাখ ২২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন দুর্নীতিবাজরা। বিভিন্ন বিভাগে ২৪ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি স্থাপনের পরও চালু না করায় জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অডিট রিপোর্টে উঠে এসেছে। এ ছাড়া আরও নানা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি পাওয়া গেছে তাজউদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অডিট রিপোর্টে।
কর্নেল মালেক ও মনসুর আলী মেডিক্যাল স্থাপন প্রকল্প : এ দুটি প্রকল্পে ৭৩২ কোটি ৭৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯৯ টাকার দুর্নীতি হয়েছে। এর মধ্যে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে ৩৬৩ কোটি ৪৩ লাখ ৩১ হাজার ৪৪৫ টাকা। অডিট দলের রিপোর্টে বলা হয়, সিরাজগঞ্জে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ এবং ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পে যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ ১২৭ কোটি ৮০ লাখ ৭১ হাজার ৫২৪ টাকা পরিশোধ দেখানো হলেও যন্ত্রপাতি বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। অনিয়মিতভাবে যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ২৬ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬২৬ টাকা, যা বিধিবহির্ভূত নয়। পিসিআর, আরবিসি কাউন্টার, ডিসেকটিং টেবিল ও অটোপসি টেবিল ক্রয় বাবদ ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অনিয়মিতভাবে যন্ত্রপাতি ও অন্য সরঞ্জামাদি ক্রয় বাবদ ১৫৫ কোটি ৭০ লাখ ৩৪ হাজার ৮১০ টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে রিপোর্টে উঠে এসেছে।
কর্নেল মালেক মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পে বার্ষিক কর্ম পরিকল্পনা ছাড়াই ঠিকা দাবি পরিশোধ, যন্ত্রপাতি না কিনেই ব্যয় দেখানো, ভূমি অধিগ্রহণে অতিরিক্ত ব্যয় পরিশোধ, অনাদায়ী আয়করসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের জালিয়াতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল : আর্থিক ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে ক্রয়চুক্তি অনুমোদন করায় অনিয়মিতভাবে ব্যয় করা হয় ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। আমদানির পক্ষে কোনো রেকর্ড-পত্রগ্রহণ না করা সত্ত্বেও ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহ বাবদ ঠিকাদারকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এমএসআর কেমিক্যাল রি-এজেন্ট বাজারমূল্য অপেক্ষা অতিরিক্ত দরে পরিশোধ করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি ১৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা। স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত এমএসআর ওষুধ ও সার্জিক্যাল টেপ ক্রয়ে আর্থিক জালিয়াতি ১ কোটি ১৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। অতিরিক্ত দরে ব্রয়লার মুরগির মাংস ক্রয়ে আর্থিক ক্ষতি ৬০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ। পণ্য খাতে রোগী অপেক্ষা পাউরুটি, কলা ও ডিম সরবরাহ দেখিয়ে ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা আত্মসাৎ। বেড সংখ্যা অপেক্ষা অধিক রোগীর পথ্য দেখিয়ে ১ কোটি ৮২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে ৬৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৯৬ টাকার গুরুতর অনিয়ম হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল : অগ্নিকা-ের ভুয়া ক্ষতি দেখিয়ে ৪ কোটি ৮৮ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৩ টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। খুচরা বিক্রয়ের জন্য উচ্চমূল্যে ওষুধ কেনা, পিপিআরের বিধান লঙ্ঘন করে সরাসরি কার্যাদেশ প্রদান করে যন্ত্রপাতি কেনা, ভারী যন্ত্রপাতি সরবরাহের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্টসের আইটিটি ক্লজ এবং শিডিউলের শর্ত মোতাবেক মেশিনের গায়ে অ্যাম্বোস বা খোদাই করা কাউন্টি অব অরিজিন লিখা না থাকা সত্ত্বেও ঠিকাদারকে ৮ কোটি ৩৭ লাখ ৪৭ হাজার টাকার বিল পরিশোধ, বাজারমূল্য যাচাই না করেই এক্স- রে ফিল্ম এবং সার্জিক্যাল গ্লাভস ক্রয় করাসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে ১৮৮ কোটি ২১ লাখ ৭২ হাজার টাকার অনিয়ম হয়েছে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। এর মধ্যে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে ৮৬ কোটি টাকার। বাকি ১০৪ কোটির অনিয়মকে সাধারণ অনিয়ম বলছে অডিট দল।
ঢাকা মেডিক্যাল : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও (ঢামেক) অনিয়মের ফলে আর্থিক ক্ষতি ও অপচয়ের কথা বলা হয়েছে অডিট রিপোর্টে। এখানে জালিয়াতির ঘটনা তুলনামূলক কম। সার্বিকভাবে ঢামেকের চিকিৎসাব্যবস্থায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে অডিট দল।
ঢাকা ডেন্টাল হাসপাতাল : বিলে আয়কর কম কর্তন করায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ১ লাখ ৯১ হাজার ২৭২ টাকা। বাজারমূল্য যাচাই ছাড়াই উচ্চমূল্যে মালামাল কেনার ফলে আর্থিক ক্ষতি ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। যানবাহন মেরামত বাবদ আর্থিক ক্ষমতার অতিরিক্ত ২ লাখ ৯৯ হাজার ৯০০ টাকা ব্যয়। হিসাবরক্ষণ অফিসের সঙ্গে হিসাবের সংগতিসাধন করা হয়নি। এ খাতে ২২ কোটি ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ৯২৭ টাকা জড়িত। বিপুল এই অঙ্কের সঙ্গে দুর্নীতি জড়িত বলে ধারণা করছেন কর্মকর্তারা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজের বকেয়া বিল বাবদ ১৯ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫০ টাকা অনিয়মিত পরিশোধ করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল : চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৮ কোটি টাকার অনিয়ম হয়েছে বলে অডিট দল রিপোর্টে উল্লেখ করেছে। চমেকে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে পুনঃদরপত্র আহ্বান করে সর্বোচ্চ দরদাতা ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া, সরকারি বাসায় বাস করেও বাড়িভাড়া-ভাতা গ্রহণ, দুর্নীতির উদ্দেশ্যে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত স্যালাইন না কিনে অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে স্যালাইন কেনা, চিকিৎসা ও শল্য সরঞ্জাম কেনায় টাকার গরমিলে অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে।
কুমিল্লা ও ঢাকার মিডফোর্ড : কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মিডফোর্ড হাসপাতালে প্রায় ৬৮ কোটি টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। একই অর্থবছরে বাজারদরের চেয়ে বেশি মূল্যে এমএসআর সামগ্রী ক্রয় করায় ১ কোটি ৪৭ লাখ ৯৪ হাজার ৩৫০ টাকার ক্ষতি ধরা পড়েছে অডিটে। প্যাথলজি বিভাগে রোগীদের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের চেয়ে কম জমা করে ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৭২০ টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। লিনেন ধৌতকরণ কাজের ওপর ঠিকাদারের কাছ থেকে কম হারে ভ্যাট কর্তন করায় সরকারের ৬ লাখ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে। এক্স-রে ফিল্ম, ইসিজি ফিল্ম (বহির্বিভাগ) এবং এমআরআই ফিল্ম ব্যবহার অনুযায়ী জমাযোগ্য ইউজার ফির চেয়ে কম জমা করে ৫১ লাখ ৩১ হাজার ১০৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সিরিঞ্জ কোম্পানির মুদ্রিত খুচরা বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ক্রয় করায় ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৪ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সিএমএসডির সরবরাহ করা ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকার চিকিৎসা মেশিনারি ও সরঞ্জাম ইন্সটল না করায় সরকারি অর্থের অপচয় করেছে কর্তৃপক্ষ। পিপিআরের বিধিবহির্ভূতভাবে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কিনে ৩৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬৮ হাজার ৯৪০ টাকার আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। অনুমোদন ছাড়া এমএসআর মালামাল কিনে ৮ কোটি ২৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি করা হয়েছে। দুর্নীতির উদ্দেশ্যে কেমিক্যাল রি-এজেন্ট ও যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ অনুমোদিত বিভাজন হারের চেয়ে ৩ কোটি ২০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা বেশি ব্যয় করা হয়েছে। অনুমোদিত বেডের অতিরিক্ত পথ্য ব্যয় দেখিয়ে ৪৭ লাখ সাড়ে ৩৬ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে ইনফো নরমাল স্যালাইন এবং ইনফিউশন সেট ও হার্টসম্যান সল্যুশন না কিনে খোলা বাজার থেকে উচ্চমূল্যে কিনে ২৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। রোগীদের বিছানার চাদর ও বালিশ না দিয়ে ৬০ লাখ ২৮ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। চাহিদা ও প্রয়োজন ছাড়াই মালামাল কিনে ১৩ লাখ টাকার অধিক আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে।
রাজশাহী মেডিক্যাল এবং শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল : রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ এবং বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩৭৬ কোটি ২৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৩১ টাকার অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৩৪০ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ৩০৬ টাকার গুরুতর অনিয়ম হয়েছে। আর ৫ কোটি ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৮৮৫ টাকার বিধি ও পদ্ধতিগত অনিয়ম হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অপ্রয়োজনীয়ভাবে ওষুধ কেনা, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট থেকে স্যালাইন না কিনে ঠিকাদার থেকে কিনে আর্থিক ক্ষতি, ইনকেজশন আত্মসাৎ নন-মেডিক্যাল ফার্নিচারে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়, ইউজার ফি কম আদায় ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে।
অন্যদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পিপিআরের প্রবিধান এবং আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ বিধিমালা লঙ্ঘন করে ইডিসিএল থেকে ১২ কোটি ৪ লাখ সাড়ে ১৬ হাজার টাকার ওষুধ কেনায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অনিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে দরপত্র অনুমোদন গ্রহণ না করে পিপিআরের বিধান উপেক্ষা করে ৫ কোটি ৭৮ লাখ সাড়ে ১৪ হাজার টাকার যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এ কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। এমএসআর ক্রয়ে বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ব্যয় করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি ৪৯ লাখ সাড়ে ৫৮ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে বিভাজন অনুযায়ী ইডিসিএল থেকে ওষুধ কম ক্রয় করায় ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পটুয়াখালী মেডিক্যাল : নির্মাণ ও পূর্ত কাজে অর্থ ব্যয়ের সমর্থনে খাতভিত্তিক আয়-ব্যয় হিসাব, নথি, বিল-ভাউচার, রেজিস্টার ইত্যাদি নিরীক্ষায় দাখিল করেনি কর্তৃপক্ষ। এসব খাতে জড়িত অর্থের পরিমাণ ৪০ কোটি টাকা।
মহাখালী নিমিউ এন্ড টিসি এবং রংপুর ও সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল : অনিয়মিতভাবে মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি মেরামত ও সার্ভিসিং খাতের বরাদ্দ করা অর্থ দিয়ে মন্ত্রণালয়ের গাড়ি মেরামত, দরপত্রের চেয়ে বেশি মূল্য পরিশোধ করে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে। অডিট দলের প্রতিবেদনে এই তিন প্রতিষ্ঠানে ৭ কোটি ৭০ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭ টাকার অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে উঠে এসেছে। এর মধ্যে গুরুতর অনিয়ম হয়েছে ৫ কোটি ৫০ লাখ ৬২ হাজার ৫৪৯ টাকার। বাকি ২ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৫৪৮ টাকাকে সাধারণ অনিয়ম বলা হচ্ছে।
Leave a Reply